হাবশী শাসন - উইকিপিডিয়া
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাবশী শাসন | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১৪৮৭-১৪৯৪ | ||||||||
![]() সালতানাত আমলের বাংলার মানচিত্র | ||||||||
অবস্থা | সালতানাত | |||||||
রাজধানী | গৌড় | |||||||
প্রচলিত ভাষা | ফার্সি বাংলা আরবি | |||||||
ধর্ম | রাষ্ট্রধর্ম: সুন্নি ইসলাম (হানাফি) অন্যান্য ধর্ম: হিন্দু বৌদ্ধ | |||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | |||||||
সুলতান | ||||||||
• ১৪৮৭ | শাহজাদা বারবক | |||||||
• ১৪৮৭-৮৯ | সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহ | |||||||
• ১৪৮৯-৯০ | দ্বিতীয় মাহমুদ শাহ | |||||||
• ১৪৯০-১৪৯৪ | শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহ | |||||||
ইতিহাস | ||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ১৪৮৭ | |||||||
• পতন | ১৪৯৪ | |||||||
মুদ্রা | টাকা | |||||||
| ||||||||
বর্তমানে যার অংশ | ![]() ![]() ![]() ![]() |
হাবশী শাসন দ্বারা বাংলায় বাংলা সালতানাতের ১৪৮৭ সাল থেকে ১৪৯৩ বা ১৪৯৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া আফ্রিকার ইথিওপীয় হাবশি বংশোদ্ভুত শাসকদের শাসনকে বুঝানো হয়। এই সময়কালে চারজন হাবশি শাসক বাংলা শাসন করেন। এই শাসনের শুরু হয় ইলিয়াস শাহী রাজবংশের জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে।
ইলিয়াস শাহী রাজবংশের পূর্ব থেকেই মুসলিম শাসকদের হাবশি দাসদের ক্রয় করা ও তাদেরকে রাজপ্রাসাদ বা রাজত্বের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের প্রচলন ছিল। জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহের শাসনামলেও এমন কিছু দাসদেরকে রাজপ্রাসাদ প্রহরীর দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়, যারা ক্রমান্বয়ে নিজেদের মধ্যে ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যাচ্ছিল। জালালউদ্দিন তাদের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাবশীরা শাহজাদা বারবকের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে ও সুলতানকে হত্যা করে রাজ সিংহাসনের দখল নিয়ে নেয়।
শাহজাদা বারবক ১৪৮৭ সালে জালালউদ্দিন ফাতেহ শাহকে হত্যা করে শাসন গ্রহণ করেন।[১] তিনি গিয়াসউদ্দিন শাহজাদা বারবক নামধারণ করেন। তার শাসনামল কম সময় স্থায়ী হওয়ায় তিনি অল্প কিছু মুদ্রা শুরু করতে পেরেছিলেন।[১] সিংহাসনগ্রহণের কয়েক মাসকাল পরেই ইলিয়াস শাহীর অনুগত মালিক আনদিল খান তাকে হত্যা করেন ও সিংহাসন গ্রহণ করেন।
আন্দিল হাবশী বা সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহ দুই বছর সময়কাল বাংলা শাসন করেন। তিনি বারবককে হত্যা করে সিংহাসন গ্রহণ করেন। অনেকে তাকেই হাবশী শাসনের মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অবহিত করেন। কারণ, বারবক অল্প কিছুদিন শাসন করেছিলেন। কথিত আছে, তিনি নপুংসক ছিলেন। তিনি প্রজাবৎসল ও দয়ালু ছিলেন। তিনি ১৪৮৭ থেকে ১৪৮৯ সাল পর্যন্ত শাসন করেন। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদের মতে তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। তবে গোলাম হোসেন সেলিম ও যদুনাথের মত কিছু ঐতিহাসিকের মতে তাকেও কোনও এক প্রাসাদরক্ষী হত্যা করেছিল।
দ্বিতীয় মাহমুদ শাহ ছিলেন সাইফুদ্দিন ফিরোজ শাহের দত্তক পুত্র। তিনি নাবালক বয়সে শাসনভার গ্রহণ করেন। তার রাজপ্রতিভূ ছিলেন হাবশ খান। একবছর সময় পর ১৪৯০ সালে তাকে ও হাবশ খানকে সিদি বদর হত্যা করে শাসন গ্রহণ করেন।[২]
শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহ বা সিদি বদর ছিলেন সর্বাধিক কাল বাংলা শাসন করা হাবশী শাসক। বাংলা দখল করার অভিপ্রায়ে তিনি সুলতানকে হত্যা করার জন্য অগ্রসর হওয়ার আগে প্রথমে বালক সুলতান মাহমুদ শাহ দ্বিতীয়ের রাজপ্রতিভূ হাবাশ খানকে হত্যা করেন। বদর শামস-উদ-দীন মুজাফফর শাহ উপাধি গ্রহণ করে সিংহাসনে আরোহণ করেন।
তিনি ত্রিশ হাজার সৈন্যের একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন; যার মধ্যে ছিল হাজার হাজার আফগান এবং পাঁচ হাজার আবিসিনিয়ান।[১] তিনি কামাতা রাজ্যকে যুদ্ধে পরাজিত করেন এবং ১৪৯২/৯২ সালে তাদের অঞ্চল জয় করেন।[১] ১৪৯৪ সালে তার উজির (মুখ্যমন্ত্রী) সাইয়্যেদ হোসেন একটি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন যাতে তিনি নিহত হন।[১]
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অন্যায়-অবিচার সামাল দিতে পারার ক্ষমতা না থাকায় হাবশী শাসন শেষ পর্যন্ত পতনের দিকে চলে যায়। যদিও সাইফউদ্দিন ফিরোজ শাহ প্রজাবৎসল ছিলেন, কিন্তু তিনি ততটা ক্ষমতা বিস্তার করতে পারেননি। এর বিপরীতে ক্ষমতার প্রসারে মনোযোগী শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহকে বাংলায় হাবশীদের ক্ষমতায়নে মনোযোগী ছিলেন। ইন্দো-পার্সিয়ান ঐতিহাসিকদের দ্বারা তাকে অত্যাচারী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, তার নিষ্ঠুরতা অভিজাতদের পাশাপাশি তার সাধারণ প্রজাদেরও বিচ্ছিন্ন করেছে বলে বলা হয়েছিল।[৩] ১৪৯৪ সালে সাইয়েদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি বিদ্রোহ হয়, যাতে শামসউদ্দিন মোজাফফর শাহ নিহত হন। সাইয়েদ হোসেন আলাউদ্দিন হোসেন শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি সকল হাবশীদের ক্ষমতা থেকে বহিষ্কার করেন ও হাবশীদের এলাকা থেকে বহিষ্কার করেন। শেষপর্যন্ত হাবশীরা দাক্ষিণাত্য ও গুজরাতের বিভিন্ন এলাকায় চলে যেতে বাধ্য হয়।[৪]
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর, সম্পাদকগণ (২০১২)। "বাংলাদেশ"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Rajadhyaksha, P. L. Kessler and Abhijit। "Kingdoms of South Asia - Indian Kingdom of Bengal"। The History Files (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০২-১৩।
- ↑ Majumdar, R.C. (ed.) (2006). The Delhi Sultanate, Mumbai: Bharatiya Vidya Bhavan, p.215
- ↑ "The African Diaspora in the Indian Ocean World"। London School of Economics।
- মেমোরিয়েন্টস
- সরকার, যদুনাথ। বাংলার ইতিহাস, দ্বিতীয় খণ্ড, মুসলিম যুগ, ১২০০-১৭৫৭।
- সিনহা, সুতপা। গৌড় পুনঃআবিষ্কার: বাংলার মধ্যযুগীয় রাজধানী।
- ফেরিস্তা, মোহাম্মদ কাসিম। তারিখ-ই-ফেরিস্তা: ভারতে মুসলিম শক্তির উত্থানের ইতিহাস, ১৬১২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত, চতুর্থ খণ্ড।